২০২৪ এর মুক্তিযুদ্ধ ও আমি | Reform Bangladesh | Quota Movement Bangladesh 2024 | Quota Protest in Bangladesh
২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন হলো বাংলাদেশে সব ধরনের সরকারি চাকরিতে প্রচলিত কোটাভিত্তিক নিয়োগ ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে সংগঠিত একটি আন্দোলন। ২০২৪ সালের ৫ জুন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকারের জারি করা পরিপত্রকে অবৈধ ঘোষণার পর কোটা পদ্ধতির সংস্কার আন্দোলন আবার নতুনভাবে আলোচনায় আসে। ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন’র পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত পরিপত্র জারি করা হয়েছিল। পরিপত্রের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে নবম গ্রেড (পূর্বতন ১ম শ্রেণি) এবং ১০ম-১৩তম গ্রেডের (পূর্বতন ২য় শ্রেণি) পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সকল কোটা বাতিল করা হয়েছিল।
শুরুতে আন্দোলন সভা-সমাবেশের মধ্যে স্থির থাকলেও ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার এক বক্তব্যে কোটা আন্দোলনকারীদের “রাজাকারের নাতি-পুতি” হিসেবে অভিহিত করেন,প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া হিসেবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ব্যঙ্গ করে “তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার; কে বলেছে? কে বলেছে? স্বৈরাচার, স্বৈরাচার” এবং “চাইতে গেলাম অধিকার; হয়ে গেলাম রাজাকার” স্লোগান দেয়। এর পরেরদিন ১৫ জুলাই আওয়ামী লীগ ও সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তা, মন্ত্রী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ নষ্ট করার অভিযোগ আনেন। একই দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতৃত্বে শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকারীদের উপর রড, লাঠি, হকি স্টিক, রামদা, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা করা হয়। একই সাথে পুলিশও লাঠি, রাবার বুলেট দিয়ে হামলা করে। প্রতিবাদে আন্দোলনকারীও তাদের দিকে ইটের টুকরা ছুড়ে ও উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে।
১৬ জুলাই ,মঙ্গলবারঃ
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আবু সাইদ পুলিশের গুলিতে নিহত হলে আন্দোলন দাবানলের মত পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়ে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়,স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও মাঠে নেমে আন্দোলনে অংশ নেন । যারা সরাসরি আন্দোলন করতে পারছিলোনা তারা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক,ইনস্টাগ্রাম,টুইটার,ইউটিউব,টিকটক ,লিংকডিন) পোস্ট করে প্রতিবাদ জানান আমি নিজেও আমার সকল সোশ্যাল হ্যান্ডেলে(ফেসবুক,ইনস্টাগ্রাম,টুইটার,ইউটিউব,টিকটক ,লিংকডিন) আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছিলাম । টুইটারে ও ফেসবুকে একাধিক পোস্ট করেছি । সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সকলে প্রতিবাদ শুরু করলে সরকার ফেসবুক অফ করে দেন। যদিও আমি সহ অনেকেই ভিপিএন ব্যবহার করে প্রতিবাদ করে গিয়েছিলাম । 
বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার কিছু পোস্ট
১৯ জুলাই শুক্রবারঃ
ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের অনান্য সংগঠন, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ দিয়ে ও ইন্টারনেট বন্ধ করেও আন্দোলন থামাতে কার্যত ব্যর্থ হলে সরকার দেশজুড়ে কারফিউ জারি করে এবং মাঠে সেনাবাহিনীকে নামায়। এইসব ঘটনায় কয়েক হাজার শিক্ষার্থী আন্দোলনকারী আহত হওয়ার পাশাপাশি ২৬৬ জনের অধিক নিহত হন এবং পুলিশ ৫০০ মামলা করে ১০,৫০০-এর অধিক মানুষকে গ্রেপ্তার করে। ২১ জুলাই বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করে ও সরকারি চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করে। ২৩ জুলাই এই বিষয়ে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে। আন্দোলনকারী ছাত্ররা এই প্রজ্ঞাপন কে প্রত্যাখান করে । ৩ আগষ্টেবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ৩ আগষ্টে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দেয়া হয় অসহযোগ আন্দোলনের রূপরেখা। ৪ তারিখ আমার বাসার বিদ্যুৎ বিল দেয়ার শেষ তারিখ জেনেও অসহযোগ আন্দোলনে সমর্থন জানাতে আমি বিদ্যুৎ বিল দেয়নি ।
৪ ই আগস্ট রবিবারঃ
শঙ্কা, ভয়, উদ্বেগ নিয়েই শুরু হয় রাজধানী ঢাকার এদিন। দুপুরের আগেই বেশ কিছু সড়কে নেমে আসেন আন্দোলনকারীরা। সরকারি দলের নেতা-কর্মী ও পুলিশের হামলায় বাঁধে সংঘর্ষ। সকাল ১০টা থেকেই যাত্রাবাড়ীতে সংঘর্ষ শুরু হয়।
৫ ই আগস্ট সোমবারঃ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচির তারিখ পরিবর্তন করে ৬ আগস্টের পরিবর্তে ৫ আগষ্ট সোমবার এ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ। এতে সারা দেশ থেকে আন্দোলনকারীদের ঢাকায় আসার আহ্বান জানানো হয়। সারাদেশ থেকে এতো পরিমাণ মানুষ এসেছিলো কল্পাণাতীত । আমি রায়েরবাগ থেকে আমার রুমমেট দুজন ( আ.কাইওয়ুম ও রিয়াজ) কে নিয়ে শনির আখড়া দিয়ে যাত্রা বাড়ি পৌছায় সকাল ১১.০০ টায় । যদিও সকাল ১০.০০ টা থেকেই পুলিশ গুলি ছুড়তে থাকে শনির আখড়ায় । হয়তো আজকে সবচেয়ে ভয়ংকর জোন ছিল রায়েরবাগ থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত এই এরিয়া টা সকাল থেকেই বড় বড় বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে আন্দোলনকারীদের উপরে গুলি করে গায়েব হয়ে যাচ্ছিলো। কি এক ভয়ানক পরিস্থিতি যারা উপস্থিত ছিলো তারা বুঝতে পারবে। কোন দিক থেকে কখন কে গুলি করছে বুঝতে পারছিলো না কেউ। এই এরিয়াতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া,নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা থেকে আসা লক্ষাধিক মানুষ থাকা স্বত্বেও বিকাল ৪:১০ টা পর্যন্ত কেউ যাত্রাবাড়ী থানা অতিক্রম করতে পারেনি। সকালে না খেয়ে বের হয়েছিলাম আন্দোলনে অনেকেই পানি,খাবার স্যালাইন, কেক ,বিস্কুট ইত্যাদি বিতরণ করেছিল এগুলো খেয়েছিলাম । রাত আনুমানিক ৯.০০ টার দিকে যাত্রাবাড়ি থানায় আগুন দেয়া হয় । এতো লাশ, আহত গুলিবিদ্ধ মানুষ আমি আমার জীবনেও দেখিনি।
![]() |
| বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার কিছু পোস্ট |
![]() |
| ৫ ই আগস্টের লং মার্চ , যাত্রাবাড়ি , ঢাকা । |

0 Comments