মিতব্যয়ী জয়নাল

পর্ব-২(শেষ পর্ব)
বাবার কথায় উৎসাহ পেয়ে কলেজে ভর্তি হয় জয়নাল। কিন্তু জামাল ভর্তি হয়নি। কাজ না পেয়ে জয়নাল পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সে চেষ্টা করে টাকা যেহেতু ইনকাম করতে পারছেনা তাই সে টাকা খরচ করবে কম। অবশ্য স্কুলে থাকতেই সে এই কাজ করত এত কিপটে ছিল যে তার সপ্তাহেও বাইরে থেকে কিছু খেত না জামাল তার অবস্থা জানে তাই কিছু বলে না। তবে জামাল সবসময় জয়নাল কে বুঝানোর চেষ্টা করত যে এমন করে কিছুই হবে না তবুও সে তার মিতব্যয়ীতা বজায় রাখে।হাইস্কুল থেকেই ফেসবুক চালানো শুরু করে জয়নাল ও জামাল। জামাল প্রতিদিন ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনে কিন্তু জয়নাল সপ্তাহে একদিন ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনে তাও এক টাকায় তিন এম্বির প্যাকেজ এর মধ্যে একদিন সন্ধান পেয়ে গেল ফ্রি ফেসবুকের তারপর থেকে এখন পর্যন্ত ফ্রি ফেসবুক ব্যবহার করে।এগুলো কে জয়নাল মিতব্যয়ীতাতা বলে।এইচ এস সি পরিক্ষা দেওয়ার পর জয়নাল একটা ইভেন্টে যোগ দেয়। আর ২০১৭ সালে সৌদিআরব পারি দেন জামাল।এদিকে ইভেন্টে কোন কাজ করতে পারে না জয়নাল। তবে সততা ও সময়নিষ্ঠা দিয়ে প্রিয় উঠে ইভেন্ট প্রধানের ফলে ইভেন্টে কিছু করতে না পারলেও ইভেন্ট প্রধান জয়নাল কে প্রস্তাব দেন তার রেস্টুরেন্ট এ কাজ করার। জয়নাল ইভেন্ট ছেড়ে যোগ দেয় রেস্টুরেন্ট ব্যবস্থাপক হিসাবে। জয়নালের বেতন এত খারাপ ছিল না। তবুও সে তার বন্ধু জামালের সাথে সেই ফ্রি ফেসবুক দিয়েই যোগাযোগ করে আসছে। এত দিন জয়নালের মিতব্যয়ীতা(কিপ্টামি)­ দেখে জামাল কিছু না বলেও এখন প্রতিদিন বলে ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনতে। কিন্তু মিতব্যয়ী জয়নাল তার কথায় থাকে।দরকার লাগলেই কেবল সে প্যাকেজ কিনে। তবে ইন্টারনেট প্যাকেজ না কিনার কারন শুধু মিতব্যয়ীতা নয় এখন জয়নালের কাছে টাকা আছে তবুও সে কেন ইন্টারনেট কিনে না তা নিয়ে চিন্তিত জামাল। এত মিতব্যয়ী হয়ে জয়নাল কি করে তাও জানে না জামাল। এগুলো জানতে চাইলে জয়নাল কৌশলে এরিয়ে যায়। তবে জামাল ও নাছোড় বান্ধা জয়নাল কে ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনিয়েই ছাড়েন।কিন্তু একদিন জয়নাল নিজেই জামালকে বলল সে কেন এম্বি কিনে না তার কারন হল সে যখন ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনবে তখন মেসেজ দেখে যে ১ জিবি ১৮ টাকা না ২ জিবি ৫৪ টাকা তখন সে টাকা রিচার্জ করতে গেলে ওখানেও মিতব্যয়ীতা করতে যায় ফলে এম্বি না এসে মিনিট চলে আসে।মানে সে ১৮ যাতে ফোনে আসে ১৮ টাকায় ফ্লেক্সির দোকানে দিয়ে আসে কিন্তু ফ্লেক্সির নিয়মমতো একটাকা কম আসে ফলে তার আর মেগাবাইট কিনা হয় না।কষ্ট হয় জয়নালের। এখন সে বিকাশ খুলেছে তাই নিজেই রিচার্জ করতে পারে ফলে মেগাবাইট কিনা সহজ কিন্তু ওখানেও গোলমাল ৪৯ টাকায় ১ জিবি। অফার দেখে লোড করল ৪৯ ওমা একি ৪৯ টাকায় ২৭৫ এম্বি চলে আসছে।এই জন্যই জয়নাল এম্বি কিনতে চায় না কিন্ত জামাল তার এই কথায় বিশ্বস্ত হল না।জামাল ভাবছে এগুলো হয়ত নতুন কোন কৌশল। আজ ১০ এপ্রিল ২০২০ আজ জয়নাল এম্বি কিনবে অফার আসছে। বলা ভাল যখন কোন অফার আসে মানে কম টাকায় বেশি এম্বি তখন জয়নাল এম্বি কিনতে চায়। বিশেষ করে ৯ টাকায় ১ জিবি অফার জয়নালের খুব প্রিয়। আর এই অফার জয়নালের সবমসময় আসে না। এম্বি কিনেই জয়নালের আসল কাজ জামাল কে জানানো যে সে এম্বি কিনেছে আহা কি আনন্দ জয়নালের। যায় আজও তার অফার এসেছে বাংলালিংক সিমে ৪৫ টাকায় ৫ জিবি জয়নাল দেখলো যে ১ জিবি ৯ টাকা তারমানে তার প্রিয় অফার। দেখেইই কি আনন্দ হচ্ছে। এম্বি কিনে জামালকে জানাতে হবে যে। তারাতারি সে দেখলো তার ফোনে কত আছে দেখে যে ব্যাল্যান্স ২০ টাকা আছে আর ২৫ টাকা হলেই হবে তারাতারি বিকাশ থেকে রিচার্জ করতে গিয়ে ভাবছে ২৫ টাকা রিচার্জ করে যদি না আসে কারন অনেক সময় ভ্যাট ট্যাক্সের কারনে একটু বেশি টাকা কাটে এর জন্য বেশ কিছু দিন রিচার্জ করেও ইন্টারনেট কিনতে পারেনি জয়নাল । সঠিক সময়ে এই কথা মনে হওয়ার জয়নাল নিজেকে জ্ঞানি আর বুদ্ধিমান ভেবে খুব মজা পেল। আর তাই সে ২৫ টাকা রিচার্জ না করে ২৬ টাকা রিচার্জ করলো। আহা এখন ৳৪৬ টাকা হল ব্যালেন্স। কিন্ত অফার মেজেছ থেকে কোড ডায়াল করার পর Congratulations না এসে আসল Sorry you do not have sufficient balance. একি কান্ড ৪৬ টাকা থাকার কথা। ব্যালেন্স চেক করতে যাবে এমন সময় মেসেজ আসলো 150MB-7Days-26TK pack purchase successful.তারাতারি জয়নাল জয়নাল বাংলালিংক ফেসবুক পেইজে গিয়ে অভিযোগ করে লিখেছে আপনাদের যে সিস্টেম। মোবাইলএ ছিল ২০ টাকা আর ২৫ টাকা রিচার্জ করলে আমি ৫ জিবি কিনতে পারবো।এখন ভ্যাট এই ৪৫ টাকায় অন্তর্ভুক্ত কিনা উল্লেখ নাই তাই আন্দাজি ১ টাকা বেশি মানে ২৬ টাকা রিচার্জ করছি। কি হল ব্যাপার টা ২৬ টাকায় ১৫০ টাকায় চলে আসছে। একজন ভোক্তভোগীই বুঝবেএরকম করার কি জ্বালা তাও আবার এই লক ডাউনের সময়।
এখন আমার প্রশ্ন হল আমি কি করে জানবো আমি যে টাকা রিচার্জ করছি তা দিয়ে মিনিট বা এই ধরনের বাজে অফার চলে আসবে না? বহু বার আমার সাথে এমন হয়েছে কিন্তু তখন লকডাউন ছিল না"অভিযোগ শেষে এবার হিসেবের পালা জয়নাল হিসেব করে দেখলো যেখানে ৯ টাকায় টাকায় ১ জিবি আসার কথা(৪৫ টাকায় ৫ জিবি অফার) আর সেখানে ২৬ টাকায় ১৫০ জিবি।খানিক বাদে জয়নাল দেখলো সে একটি হাসপাতালে আছে বাইরে এসে লেখা দেখলো পাবনা মানসিক হাসপাতাল।সে নার্সকে জিজ্ঞেস করলো সে এখানে কেন তার তো বাড়িতে থাকার কথা। নার্স উত্তর দিল এটাই তো আপনার বাসা ৬ মাস হল আপনি এখানেই আছেন। আসুন আপনার ইঞ্জেকশনের সময় হয়েছে....
★মোর‍্যাল অফ দ্যা স্টোরি: মিতব্যয়ীতা আর কিপ্টেমি এক নয়।প্র‍য়োজন হলে প্রয়োজন অনুযায়ী খরচ করা হল মিতব্যয়ী। জয়নালের মত অনেকেই আছে যারা মনে করেন খরচ না করলেই সমাধান আসলে সেটা কিছুই না। আপনার যখন যেটা প্রয়োজন সেখানে খরচ করুন।এটাই হল মিতব্যয়ীতা।

Post a Comment

3 Comments